১৯৭১ সালে যে সকল পাকিস্তানী নাগরিক বাঙ্গালিদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছিলেন তাদের মাঝে পাকিস্তানি আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর অন্যতম। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে তাকেসহ ১৩ জন ‘বাংলাদেশী বন্ধুকে’ সম্মাননা দিয়েছেন। তারা সকলেই পাকিস্তানী নাগরিক। আসমা জাহাঙ্গীরের পিতা মালিক গোলাম জিলানী ছিলেন ‘পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামীলীগের’ সহসভাপতি। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইয়াহইয়া খান বরাবর খোলা চিঠি লিখে গ্রেফতার হন তিনি।
অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে ‘বিতর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে’ পাকিস্তান প্রতিবাদ জানায়। চলমান বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি ও ত্রিদেশীয় চুক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রতিবাদ জানানোর বিরুদ্ধে, তীব্র নিন্দা ও পাল্টা যুক্তি প্রকাশ করেন আসমা জাহাঙ্গীর।
এদিকে এ বিষয়ক সংবাদের পর বাংলাদেশের সরকার সমর্থক বিশেষ করে শাহবাগী গোষ্ঠীর নিকট বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। অনুসন্ধানে দেখা যায় চলমান ‘আসমা জাহাঙ্গীর প্রচারনায়’ পাকিস্তানী ‘দৈনিক ডন পত্রিকা’কে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ, খোদ ডনের ‘খন্ডিত রিপোর্ট’ নিজেদের মত ব্যাখ্যা মিশিয়ে প্রচার করা হয় বাংলাদেশে। এর কারন কী? মূলত সরকার সমর্থকদের প্রচারনার ভাষায় ‘আসমা জাহাঙ্গীর সাকা-মুজাহিদকে পাকিস্তানি চর বলে দাবী’ করেননি। ওই রিপোর্টের বিভ্রান্তিকর প্রচারের উদ্দেশ্যেই মূলত সরকার সমর্থক উগ্র অংশটি হলুদ সাংবাদিকতার আশ্রয় নেয়। আসমা জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের পূর্ণ অংশ প্রচার করলে নিজেদের বিরুদ্ধে চলে যাবে বলেই শাহবাগ সমর্থক মিডিয়াগুলো খন্ডিত বক্তব্য নিজেদের মত করে প্রচার করেছে।
ডনের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসমা জাহাঙ্গীরের ঐ আলোচনার কেন্দ্র জুড়ে ছিলো ‘পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি’। যেখানে তিনি প্রথমত ‘নিজ দেশের বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি দূর করার তাগিদ দিয়ে, ‘তারপর অন্যদেশের বিচারের ত্রুটি’ সম্পর্কে কথা বলতে’ পাক সরকারের নিকট দাবি জানান। পাশাপাশি একজন আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের ‘নীতিভ্রষ্ট ট্রাইবুনাের’ বিরুদ্ধে নিজের খোলামেলা অবস্থান প্রকাশ করেন তিনি।

যদিও একজন মানবাধিকার কর্মীর অবস্থানে থেকে তার ‘ভৌগলিক সীমারেখা ভিত্তিক দৃষ্টিপাত কতটা মানবিক’ তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে খোদ পাকিস্তানেই। প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, ১৯৭১ এ নিজ দেশ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন হতে চলা’ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিয়ে অতীতে করা তার কাজগুলো। তাছাড়া ঐ কাজের সম্মাননা স্বরুপ বাংলাদেশ সরকারের পুরস্কার গ্রহণের ক্ষেত্রে নৈতিক ভাবে তিনি নিজেই আসলে ‘কতটা মানবতাবাদী ও কতটা পিতার দলীয় রাজনীতির ভূমিকায় ছিলেন’ এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ! এমতাবস্থায় অসহিস্নু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আসমা জাহাঙ্গীরের ‘মানবাধিকার রক্ষায় ভৌগলিক সীমারেখার এই শর্তারোপকে’ ‘অমানবিক ও আত্মপ্রবঞ্চনা’ হিসেবেই বর্ননা করছেন পাকিস্তানের অনেক মানবাধিকার কর্মী। আসমা বলেছিন, “ইসলামাবাদের আচরণে এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে নিজেদের নাগরিকের চেয়ে ‘বাংলাদেশের বিরোধী দলের সদস্যদের’ জন্য তাদের ভালোবাসা অনেক বেশী।”
(আসমা জাহাঙ্গীর ইস্যুতে অনেক মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত শিরোনাম করলেও বেশিরভাগই ছিলো অনিয়ন্ত্রিত। যদিও বিস্তারিত অংশে প্রায় সবগুলো মিডিয়াই মূলত অপসাংবাদিকতায় মগ্ন ছিলো!)
পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থায় অমানবিক বিচারে দন্ডিতদের পক্ষ নিয়ে আসমা জাহাঙ্গীর জোর দিয়ে বলেন, “সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক দালাল, তারা কাজ করছিল পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য।”
অথচ ১৯৭১ এ ‘রাজনৈতিক ভাবে’ কোন দেশের ‘সমর্থন’ করা যে, বাংলাদেশের মানবতা বিরোধী আদালতের এখতিয়ারভুক্ত কিংবা তার বিচারের উদ্দেশ্যর কোনটাই নয়, তা অনেকটা পাকিস্তান সরকারের সুরেই উল্লেখ করেন আসমা জাহাঙ্গীর। “আমি নিজেও বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ট্রাইবুনালে ‘বিচারের সঠিক প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করা হয়নি। এই ফাঁসি বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক বিভাজন’ আরও বাড়িয়ে দেবে।” বলছিলেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশের সরকার সমর্থকদের মাঝে ‘আসমা জাহাঙ্গীর ঝড়’ বয়ে চলায় বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে ঐ বক্তব্যের শ্রোতাদেরকে। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশে এই বক্তব্যকে খন্ডাকারে প্রচার করে উগ্র সেকুলার গোষ্ঠী আবারও নৈতিক পরাজয় বরন করল।’ 'আসমা স্পষ্ট করে বলেছেন ‘বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ নয়’। পাশাপাশি তিনি নিজেই দন্ডপ্রাপ্তদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বহুবার ‘বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।” তাছাড়া এর দ্বারা যে দেশটিতে ফলত রাজনৈতিক অনৈক্যের জন্ম দেবে সেই উদ্বেগটি তার বক্তব্যের অন্যতম প্রধান অংশ ছিলো! সূতরাং বলা যায় আসমা ‘জাহাঙ্গীর প্রচারনা’ দ্বারা শাহবাগ সমর্থক গোষ্ঠী নিজেরাই বিচার প্রক্রিয়ার অসামঞ্জস্যতা ও ত্রুটিগুলো নিজেদের আন্তর্জাতিক সমর্থকদের কন্ঠ দিয়ে প্রচার করলেন!
দেখা যাচ্ছে, নিজের বক্তব্যে পাকিস্তানের ‘আভ্যন্তরীন মানবাধিকার ও বিচার ব্যবস্থার সমালোচনার’ বাইরে বাংলাদেশের ‘ট্রাইবুনাল সমর্থকদের বিরুদ্ধে’ই আসমা তার সমর্থন জানান দিয়েছেন। সূতরাং অন্ধ পাকিস্তান বিরোধীতায় নেমে আসমা ইস্যুতে শাহবাগী উগ্রসমর্থক শ্রেণী, প্রকৃতপক্ষে নিজেদের বিরুদ্ধেই প্রচারনা যুদ্ধে নেমে পড়েছেন এবার! এদিকে এ অবস্থাকে শাহবাগী ও তার সমর্থক মিডিয়া গ্রুপের প্রচারযুদ্ধে ‘লাল চপেটাঘাত’ হিসেবেই উল্লেখ করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্পষ্ট করে তারা বলছেন, ‘যেখানে, খোদ পাকিস্তানই ঐ প্রতিবাদলিপিতে ত্রিদেশীয় চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ এ তাদের ‘সমর্থকদের বিচারের বিরোধীতা’ করে উদ্বেগ জানিয়েছে; উপরন্তু খোদ ট্রাইবুনালে আসামী পক্ষ বহুবার স্বীকার করেছেন যে ‘তারা ১৯৭১ এ পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমর্থক ছিলেন, যুদ্ধাপরাধী নন’, সেখানে তাদের ওপর ‘পাকিস্তান সমর্থক’ কিংবা ‘রাজনৈতিক দালাল’ আখ্যা দিয়ে, পাকিস্তান সরকারের প্রতিবাদে অস্পস্টতা খোঁজা কিংবা দন্ডপ্রাপ্তদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করার এই মরিয়া প্রচারনা স্পষ্টতই পাগলের আচরন।
সকল ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অপরাধী প্রমাণে ব্যার্থ হয়ে সরকার একদিকে ‘প্রাণভিক্ষার’ মিথ্যাচার সাজাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের ট্রাইবুনালকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রচারনায় নেমে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
সকল ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অপরাধী প্রমাণে ব্যার্থ হয়ে সরকার একদিকে ‘প্রাণভিক্ষার’ মিথ্যাচার সাজাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের ট্রাইবুনালকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রচারনায় নেমে পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
জাস্টনাউবিডি২৪
জাস্টনাউবিডি২৪
ইনফরমেটিভ !
ReplyDeleteজাস্ট অসাম, আই লাভ দিজ রাইট আপ।
ReplyDelete