শিরোনাম

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Jul 5, 2016

জামায়াত সমর্থনকারীদের জবাই করা বৈধঃ আইএস

এক্সক্লুসিভ, জাস্টনাউবিডি২৪
কল্পিত জামায়াত-ব্রাদারহুড কর্মী হত্যার চিত্র ছেপেছে আইএস!

বাংলাদেশে প্রচন্ড রাজনৈতিক পীড়নের পর, এবার বোধহয় চূড়ান্ত ট্রাজেডির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে দেশের বৃহত্তর ইসলামী দল জামায়াত। মরন কামড় হয়ে ধেয়ে আসছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস!



আইএসের মুখপত্র দাবিকের ১৪ তম সংস্করনে (বর্তমান সংখ্যা) ইরানের বিপ্লবী নেতা ইমাম খোমেনি, হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং সংগঠন হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুড, তুরস্কের স্যালভেশন পার্টি, ইন্দোনেশিয়ার মাসিইউমি পার্টি, মালয়েশিয়ার মুসলিম যুব আন্দোলন এবং ফিলিপাইনের আল-জামাআহ আল-ইসলামিয়ার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকে মুরতাদ দল বলে ফতোয়া দিয়েছে।

তাছাড়া হামজা ইউসুফ, বিলাল ফিলিপসসহ বর্তমান সময়ের আলোচিত কিছু ইসলামীক স্কলারকে 'চরমপন্থা বিরোধী' হিসেবে ইসলামত্যাগী 'তাগুদ' বলে তাদের জন্য মৃত্যুদন্ডের ফতোয়া জারি করেছে।

ঐ ম্যাগাজিনের ২৮ নং পাতায় জামায়াতের মত সংগঠনগুলোকে ইসলাম বহির্ভুক্ত ও ইসলাম বিরোধী সাব্যস্ত করে জারি করা এই ফতোয়াটি রয়েছে। এ ধরনের সংগঠনগুলোকে আইএসের আক্রমনের প্রধান টার্গেট বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

মূলতঃ মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের বিভিন্ন মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্ননার মাধ্যমে এ ধরনের সংগঠন গুলোর ব্যাপারে আইএসের চরম অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে এবারের সংখ্যায়।

আশ্চর্যের বিষয় হল, মৃত্যুদন্ডতুল্য অপরাধ হিসেবে বিরোধীতা করা এই বৈশিষ্ট্য গুলোর মাঝে একেবারেই সাধারন ও মানবীয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

আরও আশ্চর্যেত ব্যাপার হল, বাংলাদেশে প্রচলিত মিডিয়া ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রায়ই জামায়াতের বিরোধীতায় নির্দিষ্ট ঐ বৈশিষ্ট্য গুলোর 'অনুপস্থিতির' দাবি তোলা হয়।

ঐ দাবির ভিত্তিতেই দলটিকে গণবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

ফলে, বাংলাদেশে জামায়াতেরই যে বৈশিষ্ট্যগুলোকে অস্বীকার করার মাধ্যমে এর বিরোধীতার করা হচ্ছে, ঠিক বিপরীত ক্রমে ঐ বৈশিষ্ট্যের কারনেই দলটির কর্মীদেরকে হত্যার ফতোয়া দিচ্ছে চরমপন্থী গ্রুপটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাদারহুড ও জামায়াতের ঐসব সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য গুলোর বেশিরভাগই স্পষ্টত মুহাম্মাদ সাঃ এর যুগে ইসলামী আন্দোলনেরও মৌলিক উপাদান। এবং বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী বহুদিন থেকে সেগুলো মেনে আসছে।


জঙ্গি ম্যাগাজিন দাবিকের প্রচ্ছদ

দাবিকের এবারের সংখ্যায় যেসব বৈশিষ্ট্যকে পয়েন্ট আকারে ব্যাখ্যা করে, জামায়াত ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মত দলগুলোকে মুরতাদ ও তাদের নেতা কর্মীদের প্রতি মৃত্যুদন্ডের শাস্তি ধার্য করা হয়েছে, সেগুলো হল-

১. শিয়া সম্প্রদায়কে বৃহত্তর মুসলিম জামায়াতের অংশ বলে গণ্য করা।
২. আহলে কিতাবদের সাথে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের স্বীকৃতি।
৩. সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. দেশের সংবিধানকে গ্রহণ করা।
৬. বহুদলীয় রাজনীতির স্বীকৃতি প্রদান।
৭. সকল মানুষের সাধারন মানবাধিকার কে স্বীকৃতি প্রদান।
৮. তথাকথিত হত্যাযজ্ঞকে অস্বীকার ও শান্তিবাদী অবস্থা।
৯. প্রতিষ্ঠিত সরকারের সাথে সৎভাব রক্ষা।
১০. রাজনৈতিক ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি গত ভিন্নমতাবলম্বীদের কাফের স্বাব্যস্ত না করা (ইরজা)।
১১. স্বশস্ত্র হত্যাযজ্ঞকে ইসলাম সম্মত মনে না করা।
১২. সবশেষে, এই দল গুলোকে ধর্মনিরোপেক্ষ দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আইএস।

একটি জন কল্যাণকর রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। অন্যদিকে ইসলামের প্রধান শিক্ষাও বটে। এদিকে আইএসকে চরম শত্রু আখ্যা দেয়া বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মিডিয়া গুলো, নানান অজুহাতে সবচেয়ে বিপদে থাকা এই রাজনৈতিক দলকেই তার ঘাতক গোষ্টিটির পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান মিত্র বলে প্রচার করে যাচ্ছে!

বাংলাদেশে প্রায়ই আইএসের হামলা ও তৎপরতাকে অগ্রীম জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞ বলে 'নিশ্চিত তথ্য' প্রদান করা হয়। কখনো রাজনৈতিক ভাষায় সরকার দলীয় নেতাগণ আবার কখনো মিডিয়ার খবর বলে প্রচার পায় সেসব! তাছাড়া আইএস সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডায় প্রায়শই মিডিয়াগুলো জঙ্গি মুখপত্র এই 'দাবিক'কেই ভুল কোট করে থাকে।

মিডিয়াগুলোতে অনেকটা জোর করে বিভিন্ন জোড়াতালির সাহায্যে জামায়াত-শিবির কিংবা স্কলার জাকির নায়েককে আইএসের সাথে যুক্ত করে দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এদেশে জামায়াত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রভাবশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামী দলগুলোকে বিতর্কিত করতে জঙ্গি কিংবা আইএস এর সংযোগ স্থাপনের রাজনৈতিক অভীলাশ দীর্ঘ দিনের।

অনুসন্ধান বলছে, আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে চরমপন্থী সংগঠন আইএস এবং প্রচলিত বুদ্ধিবৃত্তিক দল জামায়াত এতটাই বিপরীত যে, তাদেরকে পানি ও তেলের সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি হবেনা। দলটিকে জঙ্গি গোষ্ঠি আইএস 'তাগুত', 'কুফফার' ও 'মুরতাদ গোষ্ঠী' বলে ঘোষণা দিয়েছে।

ঐ অভিধাটি ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় চরম মাত্রার বিশ্বাসঘাতক ব্যাক্তিদের পরিচয় হিসেবে ব্যবহার হয়। এ ধরনের ব্যাক্তিরা রাষ্ট্রীয় আইনে হত্যাযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য। এদেশে সেই ধরনের অভিধায় জামায়াত ও শিবিরের নেতা কর্মীদের আখ্যা দিয়েই হত্যার ফতোয়া নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এই আইএস!


মুসা আবু মারজুক
তথ্য মতে, ইসলামী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আইএসের এই ভয়ংকর উত্থানে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ইসলামী আন্দোলন হামাসের দ্বিতীয় প্রধান নেতা মুসা আবু মারজুক গোষ্ঠিটিকে মুসলিম অধিকার বিরোধী পশ্চিমাদের সৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আইএসকে দেশে দেশে ব্রাদারহুডের মত ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোকে ধ্বংসের চক্রান্তকারী বলে আখ্যা দেন তিনি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে মিশরের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা আশ শুরুক এর সাথে এক স্বাক্ষাৎকারে আল মারজুক এই মতামত ব্যাক্ত করেন।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই চরমপন্থী ও সর্বগ্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠীকে জামায়াতের মত উদার সংগঠনের সাথে গোঁজামিল দেয়ার প্রবনতা সর্বাত্মক ক্ষতির কারন হবে বলে মনে করেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মিডিয়া গুলোর এই জিঘাংসা পূর্ণ অবস্থান 'ইসলামের আলোকে ইসলামী চরমপন্থী দমনের অপূর্ব এক সুযোগ নস্যাৎ করে দিচ্ছে' বলে অভিমত তাদের। এর ফলে 'বাংলাদেশের পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়বে ও জঙ্গি পরিস্থিতি বাকী দেশগুলোর মত আত্মঘাতী অবস্থানে চলে যাবে', বলে জানাচ্ছেন তারা।

সাবেক একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক জাস্টনাউবিডি২৪ কে নাম গোপন রাখার অনুরোধ করে বলেন, 'এই মুহুর্তে জাতীয় ঐক্য প্রতীষ্ঠার বিকল্প নেই।

উদার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে উদীয়মান চরমপন্থী দমনের ক্ষেত্রে মিডিয়া গুলোর লাগামহীন জামায়াত বিদ্বেষী অবস্থান নিশ্চিত ভাবে শেষ সম্ভবনাকেও ধ্বংস করে দেবে।

উগ্রবাদ দমনে শক্তি প্রয়োগ কিংবা ইসলাম ভিত্তিক দলগুলোকে দমন করার পুরাতন কৌশল দেশে দেশে বুমেরাং হয়েছে।'

'উগ্রবাদের বিকল্প হিসেবে বুদ্ধি-প্রজ্ঞা ও ইসলামের সুন্দর মানবিকতাকেই শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বীষাক্ত আদর্শকে দমনের জন্যই যোগ্য আদর্শের মূল্যায়ন করা উচিত' মন্তব্য সাবেক এই প্রভাবশালী রাজনীতিকের।

-জাস্টনাউবিডি

No comments:

Post a Comment