শিরোনাম

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks

Nov 28, 2015

''৯০ এর দশকে শিবিরের একজন সাথীর মাসিক বেতন ছিল ৫০০ টাকা'- সাবেক শিবির কর্মীর জবানবন্দী।

-আবু জারির
 
র্বহারা পার্টির ফাঁপড়ে পরে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই ঢাকায় চলে এসেছিলাম। রেজাল্টের পর ভর্তি হলাম ঢাকা সিটি কলেজে। ক্লাশ শুরু হল ২৭/১১/১৯৯০ ইং তারিখ থেকে। সপ্তাহ না ঘুরতেই ছাত্র রাজনীতির দাবীতে ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের গুলি, অমনি কলেজ বন্ধ! ছাত্র রাজনীতির দাবী মেনেই কর্তৃপক্ষ আবার কলেজ খুলে দিলেন। ক্লাসে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী এসে ছাত্রদের সাথে পরিচিত হচ্ছিল। মজার বিষয় হল তাদের নিজেদের পরিচয় বলতে এতটুকুই বলল, 'আমরা ছাত্রলীগ, দল, ইউনিয়ন কিংবা মৈত্রী', ইত্যাদি। তারা প্রত্যেকেই যে ছাত্র সংগঠনটার বিস্তারিত পরিচয় বললেন, তাহল 'ছাত্রশিবির'!!
'ছাত্রশিবির' সম্পর্কে গ্রামের স্কুলে থাকতেও একবার শুনেছিলাম কিন্তু বুঝিনি।


কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে যখন দেখলাম 'ছাত্রশিবির' নিয়েই সকল ছাত্র সংগঠনের যত মাথা ব্যথা তখন 'ছাত্রশিবির' সম্পর্কে জানার জন্য আমার মধ্যে একটা আগ্রহ জাগল। পরের দিন মাসুদ নামের বি'কমের একজন ছাত্রের নেতৃত্বে ৪/৫ জন ছাত্র আমাদের ক্লাশে ঢুকে নিজেদের 'ছাত্রশিবিরের' কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে তাদের সম্পর্কে কিছু কথা বলল কিন্তু অন্য সংগঠন সম্পর্কে ভালো মন্দ কিছুই বললেননা। তাদের এই আচরনও আমাকে প্রভাবিত করল। আমি অন্তত এতটুকু বুঝলাম যে অন্য সংগঠনের ছাত্রদের নিজেদের কাছে এমন কোন কর্মসূচী নাই যার দ্বারা ছাত্রদের আকৃষ্ট করা যায়। পক্ষান্তরে 'ছাত্রশিবিরের' কাছে এমন কর্মসূচী আছে যা পেশ করতে পারলে ছাত্ররা তাদের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে। শিবিরের নিজস্ব কর্মসূচীই তাদের পাথেয় পক্ষান্তরে শিবির সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পথ হারা ছাত্রদের নিজেদের দলে ভেড়ানই অন্যান্য সংগঠনের মূল পূঁজি হয়ে দাঁড়িয়েছে!
ছাত্র মৈত্রী ও ইউনিয়ন যদিও তাদের নেত্রীদের হাজির করে বিকল্প পুঁজীর জানান দিয়েছিল! ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা প্রতিদিনই নিয়মিত ক্লাশ চলাকালীন সময়ে ক্লাশে এসে তাদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করতে লাগল, বক্তব্যের বিষয়বস্তু ঐ একটাই ''ছাত্রশিবির''!! অন্যান্য দলের নেতাদের মুখে একই রেকর্ড শুনতে শুনতে হাঁফিয়ে উঠছিলাম। ওরা ক্লাশে এলে কেমন যেন বিরক্তি লাগত! পক্ষান্তরে 'ছাত্রশিবিরের' নেতা মাসুদ যখন নিত্য নতুন বক্তৃতা দিতেন তখন তা থেকে শেখার কিছু পেতাম, ফলে তার বক্তৃতার সময় আমরা তন্ময় হয়ে শুনতাম এবং মায়াবি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। নির্বাচনের ২/৩ দিন পূর্বে আমাদের ক্লাশ শেষ হলে কলেজ থেকে বের হলাম। হাজারিবাগে আমার মেসের দিকে রওয়ানা হতেই 'নারায়ে তাকবীর', 'আল্লাহু আকবার', ইসলামী ছাত্রশিবির, জিন্দাবাদ, শ্লোগান গুলো শুনলাম! শ্লোগানের শব্দ গুলো যেন ঠিক কলিজায় গিয়ে আঘাত করছিল। ২/৩ মিনিট যেতে না যেতেই 'ঠুসঠাস' শুরু হয়ে গেল। সম্মিলিত আক্রমনে শিবিরের ছেলেরা কলেজ ভবন থেকে রাস্তার দিকে বেরিয়ে আসল। রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে ১৫/২০ জন শিবির কর্মীকে চতুর্দিক থেকে পাইকারী দরে কিল ঘুষি দিতে থাকল! ছাত্র সংগঠনের ছাত্রদের এই নিষ্ঠুর আচরন দেখে আমি সেদিনই শিবিরের প্যানেলে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ছাত্রদল ব্যপক ভোটে পূর্ণ প্যানেলে জয় লাভ করল। ছাত্রলীগ দ্বিতীয় এবং শিবির তৃতীয়! 
নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক পরে ক্লাশ শেষ করে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন সালাম দিল। ফিরে দেখি শিবির নেতা মাসুদ ভাই। আমার সাথে হাত মিলালেন এবং আমার কুশল জিজ্ঞেস করলেন। কিছুদিন পরে আমাকে একটা বই পড়তে দিলেন, পড়ে ফেরত দিলাম। এভাবে কয়েকটা বই পড়লাম। যতই পড়ছি ততই শিবির সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠছি। বি'কম পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় মাসুদ ভাইর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আমিও হাজারিবাগের মেস পরিবর্তন করে শুক্রাবাদে চলে গেলাম। মাঝেমধ্যে পশ্চিম রাজাবাজার মসজিদে নামায পড়তে যেতাম! একদিন ইসলাম উদ্দিন নামে জগন্নাথে মাস্টার্স পড়ুয়া এক বড় ভাই আমাকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। তার ভিতর যেন আমি মাসুদ ভাইয়ের প্রতিচ্ছবিই দেখতে পেলাম। পাবনার ইসলাম ভাই আর নোয়খালীর মাসুদ ভাইয়ের আচরনে এক অপূর্ব মিল দেখে আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করলাম নিশ্চয়ই ইসলাম ভাইও শিবির কর্মী হবেন।
আমার ধারনা ঠিকই সত্য হল। পর্যায় ক্রমে, আমিন ভাই, টিপু ভাই, ওয়াহেদ ভাই, হানিফ ভাই, টোকন ভাই, আব্দুল হক ভাই, সোহেল ভাই, আযাদ ভাই, সেলিম ভাই, খোকন ভাই সহ অনেকের সাথেই পরিচয় হল। তারা আমাকে শিবিরের দাওয়াত দিলেন এবং একপর্যায়ে আমাকে শিবিরের কর্মী হিসেবে ঘোষণা করলেন।  এবার শুরু হল সাথী হওয়ার সংগ্রাম। আমি যে মেসে থাকতাম সেথানে সিরাজ গঞ্জের হালিম ভাই নামে ছাত্রলীগের একজন নেতা থাকতেন। তিনি নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজে বি'কমের ছাত্র। তার বাবার নামের সাথে আমার আব্বার নামের মিল থাকায় আমাকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন। আমাকে তিনি অসম্ভব ভালোবাসতেন। কেন শিবির করি এটাই তার আক্ষেপ! রাশেদ খান মেনন যেদিন গুলি খেলেন সেদিন হালিম ভাই না থাকলে মেসের অন্যান্য সদস্যদের হাতে আমাকে রাম ধোলাই খেতে হত। আমি বাদে হালিম ভাই সহ মেসের বাকী ৬ সদস্যই ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী! মজার ব্যপার হল তাদের কাছে শিবির প্রকাশিত ফোকাস গাইড দেখেছি! তবে যেখানে শিবির লেখা ছিল সেখানে হয় কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়েছে, না হয় পৃষ্ঠাটাই ছিঁড়ে ফেলেছে!


এক দিকে আমি সাথী হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছি আর অন্য দিকে হালিম ভাই আমাকে শিবির ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কার্যকরী কোন যুক্তি দেখাতে পারছেনা। এক পর্যায়ে হালিম ভাই বললেন- 'শিবির, সাথীদের ৫০০ টাকা এবং সদস্যদের ১০০০ টাকা করে মাসিক বেতন দেয়, আর যারা ফুলটাইম সময় দেয় তাদের এক একজনের বেতন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত'! আমি সরল মনে আমার দায়িত্বশীল ইসলাম ভাইকে জিজ্ঞেস করলে উনি মুচকি হেসে বললেন, 'আগে সাথী হন তখন নিজেই বুঝতে পারবেন'! ইসলাম ভাইয়ের জবাবে নিজে একটা গোলক ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেলাম।
সাথী হবার চেষ্টা অব্যহত রইল। মাঝে মধ্যে চিন্তা করতাম যদি সত্যি সত্যিই মাসে ৫০০ টাকা পাই তাহলে টিউশানিটা ছেড়ে দিব এবং সাংগঠনিক সময় আরো বাড়িয়ে দিব। রমজান মাসে সেই কাঙ্খিত সময়টা আসল। তখন তেঁজগাও থানার সভাপতি মাসুম বিল্লাহ ভাই আামকে মহানগরী অফিসে নিয়ে গেলেন। মরহুম সোহেল আহম্মেদ চৌধুরী ভাই একটা ইন্টার্ভিউ নিলেন এবং শেষে আমাদের কয়েক জনকে সাথী হিসেবে শপথ পড়ালেন। তখন ঈদের আর কয়েকদিন বাকী। শিবিরের তৎকালিন তেঁজগাও থানার বায়তুল মাল সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ভাই জিজ্ঞেস করলেন কবে বাড়িতে যাচ্ছি? আগামীকাল বলে উত্তর দিতেই উনি সভাব সুলভ হাত মিলালেন। তার সাথে হাত মিলালে প্রায়ই হাতের সাথে বাদাম / চকলেট / চিরকুট পাওয়া যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হলনা। কিন্তু আজকের ঘটনাটা ঘটল ভিন্ন! তিনি তার পথে আর আমি আমার পথে রওয়ানা হয়ে হাত খুলে দেখি তিনটি একশত টাকার নোট! কোন চিরকুট নেই! 
ভাবনায় পড়ে গেলাম! মনে মনে ভাবলাম এটা মনে হয় সাথী হওয়ায় আমার প্রথম মাসের বেতন। কিন্তু ৩০০ টাকা কেন? হালিম ভাইর কাছেতো শুনেছিলাম ৫০০ টাকার কথা! নিজে যেহেতু কমার্সের ছাত্র তাই হিসাব মিলাতে দেরি হলোনা। সাথী হয়েছি ১২ তারিখে তাই হয়ত আনুমানিক খুচরা মাসের বেতন! মনটা কিছুটা ফুরফুরে হয়ে গেল। আয়ের নতুন একটা উৎস পেলাম! শিবির, খরচ গুলোর লিখিত ডকুমেন্ট রাখে তাই বিকেল বেলায় বেতনের ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে আমিন ভাইর বাসায় গেলাম। আমিন ভাইরা খান্দানী সিলেটি। বাবা মৌলভি বাজার জেলার বড়লেখা থানার একটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। বড় ভাই আওয়ামিলীগের নেতা এবং ঢাকায় ট্রাভেল ব্যবসায়ী। মেঝভাই, ছোট ভাই এবং বোনেরা স্ব স্ব পরিবার নিয়ে লন্ডন প্রবাসি। ছয়তলা বাড়ির নিচ তলায় গাড়ির গ্যারেজ, হলরুম, কেয়ারটেকারের রুম, গেস্ট রুম এবং আমিন ভাই এর রিডিং রুম। দোতলায় বড় ভাইভাবি সহ পুরা পরিবারের বসবাস। আব্বাআম্মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাঝে মধ্যে ঢাকায় বেড়াতে আসেন।
আমিন ভাইয়ের কাছে গিয়ে টাকার জন্য কোথায় স্বাক্ষর দিতে হবে এবং ৫০০ টকার জায়গায় ৩০০ টাকা পেলাম কেন? এবং আগামী মাস থেকে নিয়মিত ৫০০ টাকা করে পাব কিনা জানতে চাইলাম। আমিন ভাই বললেন, প্রতি মাসেতো ৫০০ করে দেয়া সম্ভব না। তবে মাঝে মধ্যে পাবেন! আমি বললাম কেন? যদি নিয়মিত বেতন দেন তাহলে টিউশানিটা ছেড়ে দিব। আমিন ভাই আমার কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে পারলেন না। বরং জিজ্ঞেস করলেন, আমি বেতন বেতন করছি কেন? কিসের বেতন! বললাম কেন সাথী হয়েছি সেজন্য মাসে ৫০০ টাকা বেতন দেয়ার কথা সেটা? আমিন ভাই হো.. হো.. করে হেসে দিলেন। তিনি আমার সমবয়সী হওয়ায় বেশ মজা পেলেন। বললেন আরে পাগল, 'শিবির সাথী সদস্যদের কোন বেতন দেয়না বরং সাথী সদস্যরাই তাদের পকেটের পয়সা দিয়ে সংগঠন চালায়! তাহলে আমাকে যে ৩০০ টাকা দিলেন সেটা কিসের? আমিন ভাই চুপষে গেলেন! আমি বল্লাম- এই নেন আপনার টাকা, আমি নিবনা। আমিন ভাইর সুন্দর মুখটা মলিন হয়ে গেল! চোখের কোণে মনেহয় পানিও এসে গেছে। টাকার উৎসাটা হয়ত উনি আমাকে জানাতে চান নি! কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা! না জেনে না বুঝে আমি কিসের টাকা নিব? হোক না সেটা শত বা তিন হাজার বা যে কোন পরিমান টাকা!
আমি বিদায় নিয়ে আসার সময় আমার সাথে সাথে গেটের বাহিরে আসলেন। আমাকে অতিসয় বিনয়ের সাথে বল্লেন, 'আমার বড়বোন লন্ডন থেকে কিছু টাকা পাঠিয়েছেন গরীব ছাত্রদের দেয়ার জন্য। আপনি যেহেতু বাড়ি থেকে পুরা খরচ আনতে পারেন না এবং টিউশানি করে পকেট খরচ চালান সেহেতু সেই টাকা থেকে আপনাকে এই ৩০০ টাকা দিয়েছিলাম'। আমিন ভাইয়ের সরল উক্তির জন্য তাকে ধন্যবাদ জানালাম এবং দান গ্রহন করার মত অবস্থায় নাই বলে টাকা গুলো বরং আমার চেয়েও যারা বেশি নিডি তাদের দেয়ার জন্য বলে বিদায় নিলাম।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে প্রকাশিত হয়েছে)

8 comments:

  1. আল্লাহু আকবার

    ReplyDelete
  2. আল্লাহ তুমি এদের ভাল রাখ। আমিন আমিন আমিন

    ReplyDelete
  3. Allahu akbar •••

    ReplyDelete
  4. Anonymous1/12/15 10:46 PM
    আল্লাহু আকবার.Thanks .I have More story know.

    ReplyDelete
  5. Alhamdulillah. Tomader somporke joto pori totoi valo lage.

    ReplyDelete
  6. আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!

    ReplyDelete