জাস্টনাউবিডি২৪ অনুষন্ধান,
চিঠি যে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এই আধুনিক জামানায় এসেও তার প্রমাণ মিলল। প্রাণভিক্ষা প্রমাণে অপরিহার্য দুটি কাগজ, যা রাষ্ট্রপতি বরাবর দন্ডপ্রাপ্তের লেখা নিছকই সাধারন চিঠি ছিলো, সেটি যখন প্রকাশে অপারগ সরকার। তখনই 'প্রকাশ অযোগ্য' সে চিঠির বিকল্প হয়ে উঠল কারা কর্তৃপক্ষের লেখা সরকারী আরেক চিঠি! যেন, প্রাণভিক্ষা নিয়ে সরকার বনাম জনতার মাঝে চলে আসা এতদিনকার বিতর্ক, জল্পনা-কল্পনার সব কিছু হঠাৎই উবে গেল। দন্ডপ্রাপ্ত প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিক আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পরিবার হতে প্রকাশ পাওয়া শেষ স্বাক্ষাতের চিঠিই হয়ে উঠল বহু প্রশ্নের 'একজবাব'।
সেই জবাব অনুসন্ধানে জাস্টনাউবিডি২৪ এর বিশ্লেষণ পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হল।
প্রথম ক্লু- (শেষ স্বাক্ষাতের চিঠি ইস্যুর টাইমিং)
ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা মুজাহিদের পরিবারের জন্য সেদিন রাত ৯ টায় 'শেষ স্বাক্ষাতের' সময় নির্ধারন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী 'শেষ স্বাক্ষাতের সময়' নির্ধারনকারী চিঠি ইস্যু করা হয়, নির্ধারিত স্বাক্ষাতের 'অন্তত দেড় ঘন্টা' আগে। এছাড়া চিঠির পাশাপাশি মুজাহিদ পরিবারকে ফোনের মাধ্যমেও 'শেষ স্বাক্ষাতের' বিষয়টি অবহিত করা হয়। রাত ৯ টার 'শেষ স্বাক্ষাতের' ব্যাপারে অবহিতকরন ফোনটি ছিলো সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে। অর্থাৎ, চিঠি ইস্যুর নিয়ম মাফিক সময়ের (৭ টা ৩০ মিনিট) ঠিক ১৫ মিনিট বাদে আসে এই ফোন। মুজাহিদের পরিবার জানাচ্ছে, 'মূল চিঠি পরিবারের হাতে আসে শেষ স্বাক্ষাত হয়ে যাবার পর'। সেক্ষেত্রে টেলিফোন কলই ছিলো 'কার্যকর নির্দেশনা', চিঠিটি নিছকই 'ফরমালিটি মেন্টেনের' ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল! অথচ কিনা, এই ফরমাল চিঠিই এখন রাষ্ট্রপক্ষের গলার কাঁটা?
ঘটনার তদন্তে, 'টাইমিং' একটি মৌলিক ক্লু। আর সেই 'টাইমিং' বলে দিচ্ছে ৭ টা ৪৫ মিনিটেও কথিত প্রাণভিক্ষার আবেদনটি অবস্থান করছিলো আইনমন্ত্রীর বাসায়, যা সেসময় লাইভকাস্টে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোয় বারবার করে প্রচার হচ্ছিল।
তাহলে,
আলোচিত 'মার্সি পিটিশন' কি শুধুই আইওয়াশ?
কারাকর্তৃপক্ষও কি, আইনমন্ত্রীর বাসায় থাকা রাষ্ট্রপতিগামী কথিত পিটিশনের অপেক্ষা করেনি?!
"মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর কাছে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইবে যে তিনি প্রাণভিক্ষা চেয়ে কোনো আবেদন করতে চান কীনা। তারপর সেই আবেদন দেওয়া হবে কারাগারের প্রধান কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলারের কাছে। জেলার সেই দরখাস্তটি পাঠিয়ে দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে। এবিষয়ে মতামত চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আবেদনটি পাঠাবে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে। যে অপরাধের জন্যে আসামীর ফাঁসি হয়েছে সেসব অপরাধের ব্যাপারে আসামী কোনো ধরনের অনুকম্পা পেতে পারেন কীনা সেবিষয়ে মতামত দিয়ে আবেদনটি পাঠাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে। তারপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তার নোটসহ ফাইলটি পাঠাবে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সে ফাইল যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে।"
-দেখা যাচ্ছে, প্রাণভিক্ষার আবেদন সত্য হলে, তা সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিট থেকে আইনমন্ত্রীর বাসা হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে যাবার কথা। তারপর প্রধানমন্ত্রীর অফিস পার করে অবশেষে রাষ্ট্রপতির হাতে পৌঁছাবে। সকল প্রক্রিয়া সম্পাদনা এবং পরিবহনজনিত কারনেই রাষ্ট্রপতি বরাবর তা পৌঁছতে স্বাভাবিক ভাবেই একটা বড় সময় পার হয়ে যাবে। সেভাবেই সেই রাতে রাষ্ট্রপতির দ্বারা কথিত মার্সি পিটিশন খারিজ হয় রাত ১০ টা ৩০ মিনিটেরও পর।
রাত সাড়ে ১০ টার পরই মিডিয়া গুলোর লাইভ টেলিকাস্ট এবং তীব্র প্রতিযোগীতামূলক রিপোর্টিং এর কারনে দ্রুতই 'আবেদন খারিজের' এই খবরটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়।
তাহলে, কারা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই কি আইন লঙ্ঘন করে এবং খোদ রাষ্ট্রপতকে অবমাননা করে; উপরন্তু নিজেরাই 'মৃত্যুদন্ডের সময় নির্ধারন' করে নিয়ে নিজেদের স্বীদ্ধান্তে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে, মুজাহিদের পরিবারকে মুজাহিদের সামনে হাজির করার এইসব 'ধারাবাহিক রাষ্ট্রদ্রোহী কাজগুলো' করে যাচ্ছিলো!?
ধারাবাহিক রাষ্ট্রদ্রোহী বিষয়গুলো মিডিয়ায় প্রচার হবার পরেও, সরকার কি রাষ্ট্রপতির ভয়াবহ ভায়োলেশনে মৌনতা অবলম্বন করেছিলো সেদিন? রাষ্ট্রপতি কি এমনসব ভায়োলেশনগুলো জানার পর নিশ্চুপ থাকতে পারেন?
রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্বের প্রতিক। -সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই প্রতিষ্ঠানকে ভায়োলেশন করার ন্যুনতম আইনগত কোন সুযোগ নেই। ফলে সকল তথ্যউপাত্ত এবং সে রাতের প্রকাশ্য কার্যকলাপগুলো এবং সেই সাথে কারাকর্তৃপক্ষের ইস্যু করা এই দালিলিক চিঠিই বলে দিচ্ছে, কথিত 'প্রাণভিক্ষার আবেদন' একটি 'নাটক মঞ্চায়ন' ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা। মূলত সেদিন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তথা 'রাষ্ট্রপতি' বরাবরে কোন 'মার্সি পিটিশন'ই যায়নি, বরং সাধারন প্রক্রিয়াতেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
ফলে 'দোষ স্বীকার' করে ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রেরিত ঐ ভৌতিক 'প্রাণভিক্ষার আবেদনটি' কার্যতই 'প্রকাশ অযোগ্য' হয়ে পড়ে; সরকার তরফে যা একাধিকবার দাবী করা হয়েছে।
এরই সাথে যৌক্তিক অবসান ঘটে, 'প্রকাশ অযোগ্য' এক ভুতুড়ে চিঠি নিয়ে চলা সকল জল্পনা-কল্পনার, সমাপ্ত হয় অন্ধকারের আবরনে থাকা সৃজনশীল এক বিতর্কের।
এরই সাথে যৌক্তিক অবসান ঘটে, 'প্রকাশ অযোগ্য' এক ভুতুড়ে চিঠি নিয়ে চলা সকল জল্পনা-কল্পনার, সমাপ্ত হয় অন্ধকারের আবরনে থাকা সৃজনশীল এক বিতর্কের।
কেন এই নাটক?
বহুল আলোচিত এই প্রাণভিক্ষার নাটককে 'ট্রাইবুনাল নিয়ে সরকারের জন্য অপরিহার্য শেষ কেলেঙ্কারি' হিসেবে বর্ননা করেছেন একজন অপরাধ বিষেশজ্ঞ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাস্টনাউবিডি২৪ কে তিনি বলেন, "এই নাটকের মাধ্যমে একথাই প্রতিষ্ঠিত হল যে, দিনের পর দিন মিথ্যার স্তম্ভে গড়া 'ট্রাইবুনাল স্বাক্ষ্যের' ভিত্তিতে নিরপরাধ রাজনীতিকদের দোষী সাজিয়ে দন্ড দেয়ার পর, পুরো বিচারকে বৈধ করতে সর্বশেষ মৃত্যুপথযাত্রী দন্ডিতদেরকেই নিকৃষ্ট কায়দায় বেছে নেয়া হয়। মিথ্যা নটক দ্বারা 'অপরাধ স্বীকারের' মিথ্যা প্রমাণ সৃষ্টির উদ্দেশ্য থেকেই এই নাটকের জন্ম। আর এর মধ্যদিয়েই অপরাধ প্রমাণ ও দন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে, ট্রাইবুনালের 'বিচারিক ন্যায্যতায়' অনাস্থাও প্রকাশ করল খোদ বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বাস হারানো ট্রাইবুনালকে, বিশ্বাসযোগ্য করার 'অপকৌশল কফিনের' সর্বশেষ পেরেক হল, প্রাণভিক্ষার এই নাটক।"
"এটি সেই চিঠি যার মাধ্যমে শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদের সাথে শেষ বারের মত সাক্ষাৎ করার জন্য পরিবারকে ডাকা হয়। এটা একটা ফরমাল চিঠি। তবে এই চিঠিটি আমরা সাক্ষাৎ করার আগে নয়, পরে হাতে পেয়েছি। কেননা শেষ সাক্ষাত নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষ এতটাই তাড়াহুড়ো করেছে, যে এই চিঠি দেয়ার সময়ও তাদের হাতে ছিলোনা। তারা আমাদেরকে ফোন দিয়ে রাত ৯টার মধ্যে কারাগারে উপস্থিত হতে বলে। এই ফর্মাল চিঠিটিতেও আমাদেরকে রাত ৯টার মধ্যেই কারাগারে উপস্থিত হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘন্টা আগে অর্থাৎ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিঠিটি ইস্যু হয়। অন্যদিকে আমাদেরকে ফোন দেয়া হয় রাত ৭-৪৫ মিনিটে। লাইভ সংবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমার বাবার লেখা তথাকথিত মার্সি পিটিশনটি তখন আইনমন্ত্রীর বাসায়।
আমি আপনাদের সবার কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আমার বাবার শাহাদাতের আগেও কেন তাকে নিয়ে এই ঘৃন্য ও মিথ্যাচারের নাটক করা হলো?? প্রেসিডেন্ট যেখানে তথাকথিত মার্সি পিটিশন খারিজ করলেন রাত সাড়ে ১০টার পর, সেখানে খারিজ হওয়ার দেড় ঘন্টা আগে কারাগার থেকে কেন আমাদের শেষ সাক্ষাতের জন্য ডাকা হলো??
আমার মর্যাদাবান পিতা শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ যে কোন মার্সি পিটিশন করেননি, কারাগারের এই চিঠিটি তাই প্রমান করছে। কারন মার্সি পিটিশন হলে, তার মিমাংসা হওয়া পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করতো। আগেই ডেকে বসতোনা। আমি আল্লাহর কাছে এবং জনগনের কাছে আমার পিতাকে নিয়ে এই মিথ্যাচারের নাটকের অভিযোগ দাখিল করলাম। কেননা আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক।"
জাস্টনাউবিডি২৪
আপনাদের প্রতি আমার লাল সেলাম
ReplyDeletealhamdulillah.
ReplyDeleteYes
ReplyDeleteএকশত ভাগ সত্য, এই আদালত নির্জাতনের হাতিয়ার। একদিন এরও বিচার বসবে। আমরা আল্লাহ্র ওপরই ভরসা করি।
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDeleteThank
ReplyDeleteOMG just horrible situation in BD!
ReplyDeleteযথার্থ লিখেছেন।
ReplyDeleteawesome...............................................
ReplyDeleteBAL/Communist devil drama.
ReplyDeleteরাজাকারি কইরা আবার মুক্তিযোদ্ধা সরকারের কাছেই বিচার চাও? তোমাগো লজ্জা করেনা?????????
ReplyDeleteএইখানে তোরে আসতে বলছে কে?
Deleteমুক্তিযোদ্ধার সরকার না থাকলে তুই বিচার চাস না?
Deleteএকদিন সব কিছুর বিচার হবে।
ReplyDeleteer bichar ekdin hobei
ReplyDelete