-আয়াতুল্লাহ্ খোমেনী
(সম্প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে 'ভারতীয় বিজয় দিবস' দাবি করবার পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে আবারও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্টেট প্রতীষ্ঠার উগ্রহিন্দুত্ববাদী আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পাচ্ছে। কতিপয় বাংলাদেশী মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবি সে অভিলাষকে সমর্থণ করে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরনের লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী হিন্দুত্ববাদী ইন্ডিয়ার গোপন ইচ্ছা প্রকাশ হয়ে পড়লে বাংলাদেশী তরুন প্রজন্ম প্রবল প্রতিবাদ করতে থাকেন। বিশেষত সামাজিক মাধ্যম গুলোতে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক পর্যালচনা। 'অখন্ড ভারত কি?- এ বিষয়ে মিঃ আয়াতুল্লাহ খোমেনী লিখিত সাধারন আলোকপাতটি জাস্টনাউবিডি২৪ এর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হল।)
আমরা যদি গত তিন হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব সব সময় ব্রাহ্মনরা বৌদ্ধদের জৈনদের নানা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে আর্য-ব্রাহ্মনরা ভারতীয় উপমহাদেশে আসে এবং হিন্দু ধর্ম চালু করে।
হিন্দু ধর্ম চালু করলেও কর্তিত্বটা আর্য-ব্রাহ্মনদের হাতে রেখে দেয়া হয়।
নিয়ম করা হয় স্বর্গে যেতে হলে ব্রাহ্মনদের আনুগত্য করতে হবে।
বৌদ্ধরা এবং জৈনরা আর্যদের তৈরী করা এই ধর্মের সমালোচনা শুরু করে, নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
শুরু হয় বৌদ্ধদের-জৈনদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন, লাখ লাখ বৌদ্ধ এবং জৈনকে হত্যা করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের ক্ষমতা গ্রহনের আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের লোকদের উপর জৈন ধর্মের লোকদের উপর এই অত্যাচার-নির্যাতন চলতে থাকে।
রাজা অশোক উড়িষ্যাতে এক লাখ (মিলিয়ন নয়) বৌদ্ধকে হত্যা করেছিল, পরবর্তিতে রাজা অশোক এই অনুশোচনায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। রাজা শশাঙ্ক তার শাসনামলে ঘোষণা করেছিল যেখানে বৌদ্ধ পাবে সেখানেই হত্যা করবে।
সেন শাসনামলে বৌদ্ধদের উপর আবার অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে। সেন শাসমলের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে বৌদ্ধরা মুসলমানদের সাহায্য চায় ফলে বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয়ে এগিয়ে আসে।
উত্তর ভারতীয় অঞ্চল, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা যেখানেই মুসলমানরা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে বৌদ্ধরা এবং জৈনরা মুসলমানদেরকে সহযোগিতা করেছে।
মুসলমানদের ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে আর্য-ব্রাহ্মনদের অত্যাচার-নির্যাতন, জোর করে বৌদ্ধদেরকে হিন্দু বানানোর প্রচেষ্টা বন্ধ হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের আগমনে যেভাবে বৌদ্ধরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তেমনিভাবে ব্রিটিশদের আগমনে ব্রাহ্মনরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
নদীয়ার রাজা কৃষ্ণদেব নবাব সিরাজউদদৌলা থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল।
তারপর ক্রমান্বয়ে সমগ্র ভারতবর্ষই মুসলমানদের থেকে ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়।
শুরু হয় গোলামির জীবন, বৌদ্ধদের মুক্তিদাতা মুসলমানরা এবার নির্যাতিত হতে থাকে।
একদিকে ব্রিটিশ একদিকে ব্রাহ্মন দুয়ে মিলে মুসলমানদের উপর যে অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চলে সেটা থেকে আজাদী আসে ১৯৪৭ সালে।
মুসলমানরা বৌদ্ধদের মত হারিয়ে যায়নি, ধর্মও পরিবর্তন করেনি কিংবা অন্য দেশেও চলে যায়নি- বরং প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের সফলতার মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে।
ভারত মূলত কোনো দেশের নাম নয়, এরা কোনো একক জাতিও নয়। ভারত হচ্ছে একটা উপমহাদেশের নাম।
নানা জাতের নানা ভাষা-ভাষী অঞ্চল। বৃটিশরাই সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশকে একসাথে করে তবে সে সময়ও হায়দ্রাবাদ, কাশ্মীরসহ অনেক স্বাধীন রাজ্য ছিল।
অর্থাত আক্ষরিক অর্থে ব্রিটিশ ইন্ডিয়াও অখন্ড ছিল না। মুসলিম শাসনামলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যাতে স্বাধীন সুলতানি শাসন ছিল।
মুঘলদের শাসনটা ছিল মূলত উত্তর ভারত ও পাকিস্তান কেন্দ্রিক। টিপু সুলতান দক্ষিন ভারত শাসন করেছে।
গুজরাট, আসামে আলাদা মুসলিম রাজ্য ছিল। মুসলমানদের আগমনের আগেও ভারতীয় উপমহাদেশ নানা অঞ্চলে বিভক্ত ছিল এবং আলাদা আলাদা রাজা দ্বারা শাসিত হত।
মহারাষ্ট্র স্বাধীন দেশ ছিল তারা বাংলাতে লুটপাট করতে আসত। কেরালা-তামিল নাড়ু সবসময়ই স্বাধীন ছিল।
মনিপুর-মিজোরাম এরাও স্বাধীন রাজ্য ছিল। মূলত অখন্ড ভারতের স্লোগান হচ্ছে প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশগুলোকে গ্রাস করার স্লোগান আর ভারতের যেসব অঞ্চল স্বাধীন হতে চায় তাদেরকে ধরে রাখার একটা চেষ্টা।
ঐতিহাসিকভাবে হাজার বছরের অখন্ড ভারত বলে কিছু নাই। ব্রিটিশদের অধীনস্ত ইন্ডিয়ার কথা বাদ দিলে অখন্ড ভারতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
ভবিষ্যতেও অখন্ড ভারত বলে কিছু হবে না, মানুষ স্বাধীনভাবে বাচতে চায় ব্রাহ্মণ্যবাদের দাসত্ব করতে চায় না।
(লেখাটি The India Doctrine (1947-2007) থেকে সংরহকৃত)
অসাধারন সত্য ইতিহাস
ReplyDeleteনাইস
ReplyDelete